
চট্টল সময় ডেক্স ঃ
রাউজানের পাহাড়তলী থেকে অস্ত্রের মুখে মো. আব্দুর রহিম (৩৫) নামের এক ব্যবসায়ীকে একদল দুর্বৃত্তরা অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়েছে। শনিবার (৫ অক্টোবর) সকালে এই ব্যবসায়ীর ৬৯পাড়ার বাসার সামনে থেকে মোটরসাইকেল যোগে আসা অপহরণকারীরা এই ব্যবসায়ীকে নিয়ে গিয়েছিল রাউজান পৌরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ডের রাবার বাগানের ভিতরে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে রেখে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে আবার জলিলনগরে এনে ছেড়ে দেয় বলে অপহৃত ব্যবসায়ীর এক আত্মীয় জানিয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায় ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। নানা অপকর্মের নায়ক রোকন চেয়ারম্ইযানের অনুসারী। এই অজুহাত দেখিয়ে অপহরণকারীরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। ঘটনার পর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যারা এই সংবাদ জেনেছেন তাদের প্রশ্ন, অপরাধী হলে অপহরণ করা কেন ? এই ব্যবসাায়ী যদি অপরাধ করে থাকে তাকে সুনিষ্ট অভিযোগ দিয়ে আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া যেতো। সবার প্রশ্ন এই কাজ না করে তাকে কেন অপহরণ করে টাকা নেয়া হলো ?
অপহরণের শিকার মো. আব্দুর রহিম বলেছেন, তিনি চট্টগ্রামের বাইরের বাসিন্দা। দীর্ঘ সময় থেকে রাউজানে ব্যবসা করে আসছেন। স্বৈরচারের আমলে যারা এলাকায় ছিলেন তাদের কথায় চলতে হতো। কিন্তু কোনো সময় অপরাধে জড়িত ছিলাম না। সবার সাথে ছিল সুসম্পর্ক । পরিবার নিয়ে থাকি পাহাড়তলীর ঊনসত্তর পাড়া আবাসিক এলাকায়। ঘটনার দিন শনিবার সকাল ১০ টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে পাহাড়তলী বাজারের থাকা নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছিলেন মোটরসাইকেল নিয়ে। তিনি দেখেন বাসার সামনের রাস্তায় অপেক্ষমান ৩ টি মোটরসাইকেল যোগে আসা ৭ জনের একটি দল তার মোটরসাইকেলের সামনে এসে দাঁড়ায়। তারা আমার একটি ছবি দেখিয়ে বলে এই লোকটা কি তুই? হ্যাঁ উত্তর দিলে তারা আমার মোটরসাইকেলের চাবি নিয়ে নেয়। তাদের একজন কোমর থেকে অস্ত্র বের করে আমার মোটরসাইকেলে উঠে আমাকে পেছনে বসিয়ে রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাউজান রাবার বাগানে নিয়ে যায়। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে রেখে আমার সাথে থাকা ব্যবসার এক লক্ষ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে জলিলনগরে এনে ছেড়ে দেয়। এর আগে পাহাড়ে অবস্থান কালে অপহরণকারীরা আমার সাথে নানা কথাবার্তায় আমাকে বলে ‘তুই ছাত্রলীগ করিস’।
এসব কথা বলতে বলতে তারা আমার হাতে দুটি অস্ত্র হাতে দিয়ে ছবি তুলে নেয়। এই ঘটনার পর অপহরণের শিকার ব্যবসায়ীর এক আত্মীয় ওই দিন দুপুরে এই অভিযোগ নিয়ে রাউজান থানায় যায়। পুলিশ ঘটনা শুনে দুপুরে তার বাসায় গিয়ে পরিবারের সাথে কথাও বলেন। ধারণা করা হয় এই খবর অপহরণকারীদের পৌঁছলে তারা ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেয়। স্থানীয় অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তারা একটি অপরাধী চক্রের সদস্য। সুযোগ সন্ধানী এই অপরাধী চক্রটিতে রয়েছে পাহাড়তলী,কদলপুর ও ডাবুয়া এলাকার কিছু যুবক। তারা চুরি ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটনাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন স্বৈরচারের আমলে বিএনপি-জামাতের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের হামলা মামলার শিকার হয়ে এলাকার বাইরে থাকতে হয়েছিল। দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর তারা এলাকায় এসেছে। রাউজানের নির্যাতিত সকল মানুষের প্রত্যাশা ছিল রাউজানে আর স্বৈরচার গজাবে না। পালিয়ে যাওয়া চাঁদাবাজ, অপহরণকারী, চোর ডাকাতের স্থান আর রাউজানে আর হবে না। মানুষের এই আশা আকাংঙ্খার মধ্যে পাহাড়তলীর ব্যবসায়ীকে অপহরণ করার ঘটনায় মানুষের মাঝে আবার উদ্বেগ উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। এখন সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অপহরণকারীদের চিহ্নীত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেবেন আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।