নেট দুনিয়ায় ভাইরাল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান কিশোরী প্রিসিলার জীবন কাহিনী

মীর আসলাম (চট্টল সময়) :

প্রায় দুই বছর ধরে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান কিশোরী প্রিসিলা। পুরো নাম প্রিসিলা নাজনীন ফাতেমা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই ভেসে উঠে এই কিশোরীর মানবিক কর্মকণ্ডের চিত্র। শুনা যায় ধর্মীয়মূল্যবোধ নিয়ে তার পরামর্শ। ইউটিউব চ্যানেলে কখনো লাইভ স্ট্রিমিংয়ে এসে দেশাত্মবোধ, নীতি নৈতিকতা, দেশ জাতির সমস্যা সম্ভাবনার কথা শুনাতে টকশোতে যুক্ত করেন দেশের রাজনীতিবিদ,বিশিষ্টজনদের। কখনো বা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের খেটে-খাওয়া বিভিন্ন শ্রেণি মানুষকে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত করে তাদের শ্রম মেধা তুলে ধরেন, শুনান তাদের জীবন সংগ্রামের কাহিনী। আবার কখনো কখনো নিজের অর্থসহায়তা নিয়ে অসহায়, গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবার প্রশংসা ভাসেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সবাই তাকে ‘প্রিসিলা’ নামেই চেনে।

 

ধর্মীয় মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম বুকে ধারণ করে নিজকে এগিয়ে নেয়া এই কিশোরীর সম্পর্কে জানা যায় ৪ বছর বয়সে তিনি বাবা-মায়ের সাথে আমেরিকায় পাড়ি জমান। ছোটবেলায় তার স্বপ্ন ছিলো চিত্রগজৎতে প্রবেশ করার। অভিনেত্রী হয়ে নাটক ও সিনেমায় কাজ করার। এই লক্ষ্য নিয়ে তিনি ভর্তিও হহয়েছিলেন ‘নিউইয়র্ক ফিল্ম একাডেমি’-তে। অংশ নিতেন স্কুলের নাচ,গানে। তার প্রতিভা গুনে স্কুলে থাকাকালীন পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। কিশোরী প্রিসিলা এক সময় উপলব্দি করেন, এসব তার জীবনে লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। তিনি হৃদয় দিয়ে উপলব্দি করেন নিউইয়র্কের রাস্তা দিয়ে মানবতা ও মানবিকতার দৃশ্যপট। স্কুলে যাওয়া আসা-মাঝে চোখে পড়া নানা দৃশ্য দেখে তিনি জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি বদলান। সরে আসেন অভিনয়, মডেলিং থেকে। অনুসরণ করতে থাকে ধর্মীয় অনুশাষন। দুখি মানুষের দুঃখ কষ্ট দেখে ব্যতিত মনে তিনি তাদের পাশে দাঁড়ানোর সংকল্প করেন।

 

২০২১ সালে এই কিশোরীর জীবন চিত্র নিয়ে দৈনিক ইত্তেফাককে প্রকাশিত এক স্বাক্ষতকারের অংশ তুলে ধরা হলো চট্টল সময়ের পাঠক সমাজের জন্য। ওই স্বাক্ষতকারে প্রিসিলা বলেন, ‘নিউইয়র্কের রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় দেখতাম ক্ষুধার্তরা গার্বেজের ময়লা থেকে খাবার খুঁজে খাচ্ছে। কনকনে ঠাণ্ডায় শীতবস্ত্রহীন মানুষ বাইরে অসহায়ের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে—এসব আমাকে ভীষণ মর্মাহত করে। তখন আমার মনে হলো- নাচ, গান, অভিনয়ের লোকের অভাব নাই কিন্তু সমাজের অবহেলিত, সুবিধা বঞ্চিতদের সাহায্য-সহযোগিতা করা, তাদের পাশে দাঁড়ানোর মানুষের সংখ্যা কম। একজন মানুষ হিসেবে তাদের পাশে দাড়ানো আমার দায়িত্ব।

 

সে চিন্তা থেকে আমি নাচ, গান, অভিনয় ছেড়ে ২০১৭ সাল খেকে সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে রাখি। এখন নিয়মিত মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’প্রত্যন্ত এলাকায় সুপেয় পানির জন্য টিউবওয়েল স্থাপন করে দিয়েছেন। প্রিসিলা একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তুলেছেন। নিউইয়র্কে থাকলেও বাংলাদেশের দেশের ৬৪ জেলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করছে তার সংগঠনে। গরিব ও অসহায়দের মাঝে খাবারসহ নানান প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দিচ্ছে তারা। বিভিন্ন গ্রামে বিশুদ্ধ পানির জন্য আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ ও স্যানেটারি ল্যাপটিন স্থাপন, কর্মহীনদের কর্মসংস্থানের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিচ্ছে, গ্রামীণ নারীদের আর্থিক স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য সেলাই মেশিন কিনে দিচ্ছে প্রিসিলার ভলান্টিয়াররা।

প্রিসিলা বলেন, ‘বাংলাদেশি হিসেবে আমি সব সময় বাংলাদেশ নিয়ে ভাবি।

 

 

আমি চাই না কোনো মানুষ খাবারে কষ্ট পাক, বস্ত্রের অভাবে কষ্ট পাক। আমি চাই তারা যেন ভালোভাবে জীবন পার করতে পারে। তাই তাদের পাশে দাঁড়াতেই আমি কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিবছর আমার বাংলাদেশে যাওয়ার ইচ্ছে থাকে, তার জন্য টাকাও জমাই; কিন্ত যখন কোনো অসহায়ের সাহায্যে জন্য খবর আসে তখন সে টাকা দিয়ে দিই, অনুভব করি আমি দেশে যাওয়ার চাইতে তার সাহায্য টাকাটা ব্যয় করা জরুরি। তবে একদিন বাংলাদেশে যাব। সমগ্র দেশটা ঘুরে দেখব।’

সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষদের নিয়ে প্রিসিলার প্রতিদিনকার লাইভ স্ট্রিমগুলো দেখছেন লাখ লাখ মানুষ।

 

 

প্রিসিলা তার ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের পাশাপাশি কুরআন তেলাওয়াত, আজান, সংগীত, ভিডিওগ্রাফিসহ নানান প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকেন; ভলান্টিয়ারদের মাধ্যমে বিজয়ীদেরকে ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া হয় পুরস্কার। বর্তমানে ইউটিউব-ফেসবুক মিলে তার অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে আয় করা পুরো টাকা মানুষের কল্যাণে ব্যয় করছেন প্রিসিলা।

 

 

প্রিসিলা আগামী বছরের জুনে ১২তম গ্রেড সম্পন্ন করে প্রবেশ করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরমধ্যে শুরু হয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়া। প্রিসিলা জানান, চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে তাকে স্কলারশিপে পড়র সুযোগ দিতে আগ্রহী, তবে এখনো কোনোটি চুড়ান্ত হয়নি। তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা জার্নালিজম এবং ব্রডকাস্টিংয়ে পড়ালেখা করার, আবার আইন নিয়ে পড়ারও ইচ্ছা আছে। ভবিষ্যতে পড়াশোনার পাশাপাশি সমাজসেবামূলক কাজ চালিয়ে যাবে বলে জানান প্রিসিলা। মাদার তেরেসা ও প্রিন্সেস ডায়নার মতো মানবতার ফেরিওয়ালাদের মতো নিজের জীবনকে সমাজ সংস্করণে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে উৎসর্গ করতে চান এই কিশোরী।

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on linkedin
LinkedIn
Share on email
Email

সম্পর্কিত